০৩:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পদের বিবরণ দেবেন উপদেষ্টারা, কর্মকর্তাদের জন্যও বাধ্যতামূলক

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ১০:৫০:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / 18

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : বাসস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক করা হবে। রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

কৃষি খাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সব পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। প্রকৃতি ধ্বংসকারী উন্নয়ন নয়।

শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নদীনালা, খালবিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। এ কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সম্পদের বিবরণ দেবেন উপদেষ্টারা, কর্মকর্তাদের জন্যও বাধ্যতামূলক

আপডেট: ১০:৫০:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : বাসস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক করা হবে। রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

কৃষি খাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সব পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। প্রকৃতি ধ্বংসকারী উন্নয়ন নয়।

শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নদীনালা, খালবিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। এ কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।

শেয়ার করুন