০৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি, টানা দুই মাসে

ইউএনএ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৮:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 17

– চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর । ছবি: সংগৃহতি

জুলাই-আগস্টের ধাক্কা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের পণ্য রপ্তানি। তিন মাস ধরে পণ্য রপ্তানিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে টানা ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পাওয়া তথ্য তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে দেশ থেকে সব মিলিয়ে ২ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

একাধিক রপ্তানিকারক বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, শিল্পাঞ্চলে শ্রম–অসন্তোষ এবং বন্যার কারণে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যায়নি। পরে আটকে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বৃহত্তম দুই বাজার থেকে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসাও বেড়েছে। সেসব পণ্যেরও জাহাজীকরণ শুরু হওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি বড় উৎস হলো পণ্য রপ্তানি, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ। তার মধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।

ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাজার ভালো হচ্ছে। ফলে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ বেড়েছে। সেসব পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী শীত মৌসুমের ক্রয়াদেশ নিয়েও বর্তমানে দর-কষাকষি চলছে। ওই মৌসুমের জন্যও ভালো ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ

দেশ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার-সংকটে ভুগছে। তাতে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছিল। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে রিজার্ভের পতন থেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত ২৭ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের বেশি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৮৭৪ কোটি ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ৯৮৪ কোটি ডলার।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৩৮২ কোটি, আগস্টে ৪০৭ কোটি ও সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। পরবর্তী দুই মাস টানা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যেমন অক্টোবরে ৪১৩ কোটি ও নভেম্বরে ৪১২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে নভেম্বরের রপ্তানি গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এসব হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং স্যাম্পল বা নমুনা রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। এর পরিমাণ অবশ্য বেশি নয়।

সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে কোন খাতে রপ্তানি কেমন বেড়েছে, তা এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলে ও হিমায়িত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি ৯ শতাংশ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি ৬ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে হঠাৎ করে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। এর ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল প্রকাশ পায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ইপিবি দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছিল না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ততটা রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই।

মাস তিনেক বিরতির পর গত অক্টোবর থেকে ইপিবি রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করে। তারা ইপিজেডের কোম্পানিগুলোর প্রচ্ছন্ন ও নমুনা রপ্তানিসহ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ফলে তাদের হিসাব এনবিআরের হিসাবের কাছাকাছিই থাকে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাজার ভালো হচ্ছে। ফলে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ বেড়েছে। সেসব পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী শীত মৌসুমের ক্রয়াদেশ নিয়েও বর্তমানে দর–কষাকষি চলছে। ওই মৌসুমের জন্য ভালো ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও শ্রম পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সামনের মাসগুলোয় রপ্তানি বাড়বে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি, টানা দুই মাসে

আপডেট: ০৮:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

– চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর । ছবি: সংগৃহতি

জুলাই-আগস্টের ধাক্কা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের পণ্য রপ্তানি। তিন মাস ধরে পণ্য রপ্তানিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে টানা ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পাওয়া তথ্য তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে দেশ থেকে সব মিলিয়ে ২ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

একাধিক রপ্তানিকারক বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, শিল্পাঞ্চলে শ্রম–অসন্তোষ এবং বন্যার কারণে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যায়নি। পরে আটকে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বৃহত্তম দুই বাজার থেকে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসাও বেড়েছে। সেসব পণ্যেরও জাহাজীকরণ শুরু হওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি বড় উৎস হলো পণ্য রপ্তানি, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ। তার মধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।

ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাজার ভালো হচ্ছে। ফলে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ বেড়েছে। সেসব পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী শীত মৌসুমের ক্রয়াদেশ নিয়েও বর্তমানে দর-কষাকষি চলছে। ওই মৌসুমের জন্যও ভালো ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ

দেশ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার-সংকটে ভুগছে। তাতে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছিল। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে রিজার্ভের পতন থেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত ২৭ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের বেশি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৮৭৪ কোটি ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ৯৮৪ কোটি ডলার।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৩৮২ কোটি, আগস্টে ৪০৭ কোটি ও সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। পরবর্তী দুই মাস টানা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যেমন অক্টোবরে ৪১৩ কোটি ও নভেম্বরে ৪১২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে নভেম্বরের রপ্তানি গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এসব হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং স্যাম্পল বা নমুনা রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। এর পরিমাণ অবশ্য বেশি নয়।

সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে কোন খাতে রপ্তানি কেমন বেড়েছে, তা এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলে ও হিমায়িত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি ৯ শতাংশ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি ৬ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে হঠাৎ করে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। এর ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল প্রকাশ পায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ইপিবি দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছিল না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ততটা রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই।

মাস তিনেক বিরতির পর গত অক্টোবর থেকে ইপিবি রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করে। তারা ইপিজেডের কোম্পানিগুলোর প্রচ্ছন্ন ও নমুনা রপ্তানিসহ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ফলে তাদের হিসাব এনবিআরের হিসাবের কাছাকাছিই থাকে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাজার ভালো হচ্ছে। ফলে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ বেড়েছে। সেসব পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী শীত মৌসুমের ক্রয়াদেশ নিয়েও বর্তমানে দর–কষাকষি চলছে। ওই মৌসুমের জন্য ভালো ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও শ্রম পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সামনের মাসগুলোয় রপ্তানি বাড়বে।

শেয়ার করুন