মালদ্বীপে ভারত হটাও আন্দোলনে : প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এখন কি করবেন!

- আপডেট: ০৮:৫৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / 25
ভারত – মালদ্বীপ সম্পর্ক তীক্ততার শেষ পর্য়ায়ে চলে গেছে। প্রেসিডেন্ট মইজ্জু চীন থেকে ফিরে ভারতের সৈন্যদের ১৫ মার্চের মধ্যে তাদের দেশে ফিরে যাবার নির্দেশ দিলে দেশ দুটির মাঝে তিক্ততা চরমে পৌঁছেছে। ঠিক কোথায় গিয়ে দীর্ঘদিনের মিত্র দুটি দেশের তিক্ততা শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না।
তবে ভারত হটাও ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসে মুইজ্জু এখন অভিশংসনের মুখে। এরই মাঝে ভারতের এক বিজেপি নেতা ভারতকে মালদ্বীপ আক্রমনের হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে ফেলেছে।
তাছাড়া সামনের মার্চে সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের ফলাফল ও মুইজ্জুর এই আকাঙ্খা বাস্তবায়নের পথে কাটা হতে পারে।
ভারত থেকে ২২শ কিলোমিটার দূরে মালদ্বীপ। রাজধানীর নাম মালে। ১৯৬৫ সনে ব্রিটিশদের কাছ থেকে মালদ্বীপ স্বাধীনতা লাভ করে। মুলত স্বাধীনতালাভের পর থেকেই ভারতের সাথে মালদ্বীপের সুসম্পর্ক ছিল। হঠাৎ করে মালদ্বীপের সাথে তিক্ততা একদিনে হয়নি। মালদ্বীপে ১৯৭৮ সনে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় বসেন মামুন আব্দুল গাইয়ুম। শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে গাইয়ুম দেশ শাসন করতে থাকলে তার বিরুদ্ধে সাধারনের ক্ষোভ দানা বাঁধে।১৯৮৮ সনে মালদ্বীপের ব্যবসায়ী আবদুল্লা নতুকীর নেতৃত্বে শ্রীলংকা থেকে ভাড়াটে বাহিনী নিয়ে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুমকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য আক্রমন করে। গাইয়ুম সেফজোনে আত্মগোপন করে ভারতের সাহায্য চায়।এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে ভারতীয় সেনা পাঠিয়ে শ্রীলংকার ভাড়াটে বাহিনীকে দমন করে মামুন আব্দুল গাইয়ুমকে উদ্ধার করে রাস্ট্রক্ষমতায় পুন আসীন করে।
শ্রীলংকার ভাড়াটে যোদ্ধাদের তাড়িয়ে দিতে যে প্যারাটুপার ভারত পাঠায়,তাদের একটি প্যারাটুপারকে দলকে মালদ্বীপে রেখে দিতে অনুরোধ জানায় প্রেসিডেন্ট গাইয়ুম। কয়েক বছর পর সেই প্যারাটুপার বাহিনীকে ভারত ফিরিয়ে নিয়ে আসে ভারত।
২০১৪ সনে মালদ্বীপের জল শোধনাগারে আগুন লাগলে মিস্টি পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। তখন ভারত থেকে বিমানে ৪শ টন মিস্টি পানি সরবরাহ করা হয়। সেই অপারেশনের নাম নীড়।তারপর সেই বিমানটি মালদ্বীপে থেকে যায়। ডারমিনাল বিমানের সাথে বেশকিছু অস্ত্র ছাড়া সেনা ও মালদ্বীপে থেকে যায়।যার সংখ্যা ৭৭ থেকে ৮৮ জনের মত।
মালদ্বীপ একটি দ্বীপ রাস্ট্র। ছোট বড় ১২০০ দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ। জনসংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ২১ হাজার। মালদ্বীপ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতের পক্ষে থাকলেও সম্প্রতি ভারতের প্রতি বিরাগভাজন হয় এবং এরপরই ডাক উঠে ভারত হটাও।যার ফলে গত সেপ্টেম্বরে প্রচন্ড ভারত বিরোধী মালে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। তার নির্বাচনী শ্লোগান ছিল ভারত হটাও। নির্বাচিত হয়েই অঙ্গীকার পুরনে তৎপর হলে ভারতের সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। মুলত সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুম এর যথেচ্ছ ক্ষমতার অপব্যবহার ও অতিরিক্ত ভারত প্রীতিই বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর ক্ষমতা আহরনের পথ প্রশস্ত করে দেয়। তবে গাইয়ুম থেকে মোহাম্মদ মুইজ্জুর ক্ষমতা গ্রহনের মাঝ সময়টা ক্ষমতাসীনরা কম দায়ী নয়।
মালদ্বীপে একটানা ২০ বছর শাসন করে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুম।১৯৮৮ সনের ১১ ই নভেম্বর প্রথম প্রেসিডেন্ট হন গাইয়ুম।তারপর চতুর্থ বারের মত ২০০৮ সন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
এরপর ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ক্ষমতায় বসেন তারই অনুগত মোহাম্মদ নাশিদ।তারপর কোয়ালিশন সরকারের প্রেসিডেন্ট হয়ে মাত্র ১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন মো: ওয়াহিদ হাসান। পরে ক্ষমতায় আসেন কট্টর ভারত বিদ্বেষী আবদুল্লা ইয়ামিন আব্দুল কাইয়ুম।
২০১৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে ভারত বিরোধী যে বীজ রোপন করেন,তার ফলশ্রুতিতে ২০২৩ এ ক্ষমতায় আসীন হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। অবশ্য ভারত বিরোধীতার জন্য চরম খেসারত দিতে হয়, কাইয়ুমকে। কারন ২০১৮ সনের নির্বাচনে ভারত পন্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ সাবেক প্রেসিডেন্ট কাইয়ুমকে দুর্নীতির অভিযোগে ১১ বছরের কারাদন্ড দিয়ে জেলে পুড়ে রাখেন।
মূলত তখনই ভাগ্য খুলে যায়,বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর।
২০২৩ এর নির্বাচনের আগে মালদ্বীপের রাজধানী মালের মেয়র ছিলেন মুইজ্জু। নির্বাচনের আগে মুইজ্জু ঘোষনা দেন তিনি নির্বাচিত হলে ভারতের সাথে সম্পর্ক পূর্ণ বিবেচনা করবেন এবং যে স্বল্পসংখ্যক ভারতীয় সেনা আছে,তাদের বিতাড়িত করবেন।
জেলে থাকা ১১ বছরের কারাদন্ড পাওয়া ইয়ামিনের মত চরম ভারত বিরোধীতা করে ৫৩.৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রথম থেকেই তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নিতে বলেন। এবং দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে প্রথম তুরস্ক যান।পরে চীনে যান ৫ দিনের সফরে। এরই মাঝে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমনে গিয়ে বেশকিছু ছবি তার টুইটারে পোষ্ট করেন। আর এনিয়ে মালদ্বীপের ৩ মন্ত্রী বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রীত্ব হারান।
পাশাপাশি দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। চীন থেকে সফর থেকে ফিরে মুইজ্জ ভারতের সমালোচনা বাড়িয়ে দিলে পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি ঘটে। তার জেরেই ভারতের পক্ষে ফেসবুক জুড়ে বয়কট মালদ্বীপ ক্যাম্পেইন বেড়ে যায় এবং মালদ্বীপে পর্যটকদের বয়কটের ডাক ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এরপরই মালদ্বীপের বিরোধীদল মুইজ্জর অভিশংসনের জন্য স্বাক্ষর নিতে শুরু করে, যা চলমান।
আবারো সামনের মার্চেই সংসদ নির্রাচন।সেই নির্বাচনে যদি বিরোধীরা জিতে যায় এবং প্রেসিডেন্ট পদে অভিশংসন কার্যকর করতে পারে,তবে মুইজ্জুর পক্ষে ভারত বিরোধীতার গতি হয়তো থেমে যাবে সাময়িক সময়ের জন্য। তবে দুই দেশের সম্পর্কের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে,তা সহজে মুছে যাবে বলে মনে হয়না।