০৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
দর্শনার্থীদের ক্ষোভ

সৌন্দর্য হারাচ্ছে বেলস পার্ক

ইউএনএ (বরিশাল) প্রতিনিধি,
  • আপডেট: ১১:২৩:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / 9

ঐতিহাসিক বেলস পার্ক – ছবি : নিজস্ব

দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক বেলস পার্ক একসময় নগরবাসীর বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জনপ্রিয় স্থান ছিল। বৃটিশ শাসনামলের শেষ প্রান্তে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মি. বেল প্রায় ৯ একর জমিতে এ উদ্যানটি গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো জাতীয় নেতৃবৃন্দের সভা-সমাবেশেরও সাক্ষী হয়ে ওঠে পার্কটি।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেলস পার্ক হারিয়েছে তার সৌন্দর্য, রূপ নিয়েছে এক অস্থায়ী হাটবাজারে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলস পার্কের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০টিরও বেশি দোকান।

যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অনুমোদন রয়েছে মাত্র ১৭৮টি দোকানের জন্য। অতিরিক্ত দোকানগুলো পার্কের মাঠের অর্ধেকের বেশি দখল করে ফেলেছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অতিরিক্ত দোকানগুলোর বিষয়ে বিসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অস্বাভাবিক নিরব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনুমোদনের বাইরে থাকা অন্তত ৮০টি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলছে একটি প্রভাবশালী মহল। যারা নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে পরিচালনা করছেন এসব কার্যক্রম। দোকানদারদের অনেকেই চাঁদা দিতে বাধ্য হলেও ভয়ের কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। শুধু দোকান নয় পার্কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অব্যবস্থাপনার চিত্র।

শিশুদের খেলাধুলা, সাধারণ মানুষের হাঁটাহাঁটি, প্রাত.ভ্রমণ সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দোকানপাট, যানজট ও বর্জ্যরে কারণে। পার্কের পাশে থাকা ডিসি লেকেও ফেলা হচ্ছে এসব দোকানের বর্জ্য। ফলে দূষিত হচ্ছে লেকের পানি। ইতোমধ্যে শিশুপার্কে প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা ফি। যা অনেক দর্শনার্থী যৌক্তিক মনে করলেও পার্কজুড়ে দোকানের আধিপত্যে তারা চরম হতাশ।

দর্শনার্থী শারমীন আক্তার বলেন, বেলস পার্ক ছিল বরিশালের অন্যতম প্রিয় স্থান। এখন এটি যেন বাজারে পরিণত হয়েছে। হাঁটতে গেলেই ধাক্কা খেতে হয়। ময়লা, ভিড় আর কোলাহলে অতিষ্ঠ সবাই।

বরিশাল বিভাগীয় প্রাত:ভ্রমণ ও শরীরচর্চা পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, এখানে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। গত বছর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। পাশাপাশি পার্কে নেই কোনো নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে রাস্তার ওপরেই পার্ক করা হয় মোটরসাইকেল, রিকশা ও গাড়ি। যা সৃষ্টি করছে যানজট।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, এক সময় এখানে শিশুরা দৌড়াতো এখন হাঁটাও দুস্কর।

এ বিষয়ে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং বলেন, বেলস পার্কের মাঠ ও ডিসি লেক জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দোকান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, উভয় পক্ষের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতার কারণে দিন দিন পার্কটির অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।

বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি প্রশাসক রায়হান কাওছার সরেজমিন পরিদর্শন করে পার্কের ওয়াকওয়ে, লাইটিং, পাবলিক টয়লেট এবং বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজের সংস্কার চলমান রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যাটি থেকে যাচ্ছে অতিরিক্ত দোকান ও দখলদারিত্ব। অবিলম্বে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে পার্কটির প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হোক। বেলস পার্কের মতো একটি নগর ঐতিহ্যকে হাটবাজারে পরিণত হতে দেওয়া মানে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে একটি মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে যাওয়া।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

দর্শনার্থীদের ক্ষোভ

সৌন্দর্য হারাচ্ছে বেলস পার্ক

আপডেট: ১১:২৩:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ঐতিহাসিক বেলস পার্ক – ছবি : নিজস্ব

দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক বেলস পার্ক একসময় নগরবাসীর বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জনপ্রিয় স্থান ছিল। বৃটিশ শাসনামলের শেষ প্রান্তে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মি. বেল প্রায় ৯ একর জমিতে এ উদ্যানটি গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো জাতীয় নেতৃবৃন্দের সভা-সমাবেশেরও সাক্ষী হয়ে ওঠে পার্কটি।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেলস পার্ক হারিয়েছে তার সৌন্দর্য, রূপ নিয়েছে এক অস্থায়ী হাটবাজারে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলস পার্কের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০টিরও বেশি দোকান।

যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অনুমোদন রয়েছে মাত্র ১৭৮টি দোকানের জন্য। অতিরিক্ত দোকানগুলো পার্কের মাঠের অর্ধেকের বেশি দখল করে ফেলেছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অতিরিক্ত দোকানগুলোর বিষয়ে বিসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অস্বাভাবিক নিরব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনুমোদনের বাইরে থাকা অন্তত ৮০টি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলছে একটি প্রভাবশালী মহল। যারা নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে পরিচালনা করছেন এসব কার্যক্রম। দোকানদারদের অনেকেই চাঁদা দিতে বাধ্য হলেও ভয়ের কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। শুধু দোকান নয় পার্কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অব্যবস্থাপনার চিত্র।

শিশুদের খেলাধুলা, সাধারণ মানুষের হাঁটাহাঁটি, প্রাত.ভ্রমণ সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দোকানপাট, যানজট ও বর্জ্যরে কারণে। পার্কের পাশে থাকা ডিসি লেকেও ফেলা হচ্ছে এসব দোকানের বর্জ্য। ফলে দূষিত হচ্ছে লেকের পানি। ইতোমধ্যে শিশুপার্কে প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা ফি। যা অনেক দর্শনার্থী যৌক্তিক মনে করলেও পার্কজুড়ে দোকানের আধিপত্যে তারা চরম হতাশ।

দর্শনার্থী শারমীন আক্তার বলেন, বেলস পার্ক ছিল বরিশালের অন্যতম প্রিয় স্থান। এখন এটি যেন বাজারে পরিণত হয়েছে। হাঁটতে গেলেই ধাক্কা খেতে হয়। ময়লা, ভিড় আর কোলাহলে অতিষ্ঠ সবাই।

বরিশাল বিভাগীয় প্রাত:ভ্রমণ ও শরীরচর্চা পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, এখানে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। গত বছর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। পাশাপাশি পার্কে নেই কোনো নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে রাস্তার ওপরেই পার্ক করা হয় মোটরসাইকেল, রিকশা ও গাড়ি। যা সৃষ্টি করছে যানজট।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, এক সময় এখানে শিশুরা দৌড়াতো এখন হাঁটাও দুস্কর।

এ বিষয়ে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং বলেন, বেলস পার্কের মাঠ ও ডিসি লেক জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দোকান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, উভয় পক্ষের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতার কারণে দিন দিন পার্কটির অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।

বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি প্রশাসক রায়হান কাওছার সরেজমিন পরিদর্শন করে পার্কের ওয়াকওয়ে, লাইটিং, পাবলিক টয়লেট এবং বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজের সংস্কার চলমান রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যাটি থেকে যাচ্ছে অতিরিক্ত দোকান ও দখলদারিত্ব। অবিলম্বে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে পার্কটির প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হোক। বেলস পার্কের মতো একটি নগর ঐতিহ্যকে হাটবাজারে পরিণত হতে দেওয়া মানে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে একটি মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে যাওয়া।

শেয়ার করুন