০৫:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

কম্পিউটারে ভাইরাস ও এর প্রতিকার

নিউজ ডেস্ক (সংগৃহীত)
  • আপডেট: ০৯:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 91

কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে বা নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে। একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

 আইসিটি যন্ত্রের নিরাপত্তার কথাটি মাথায় রেখে এ বিষয়ে আরও জানা প্রয়োজন। প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের মতোই এ ভাইরাসগুলাে আমাদের আইসিটি যন্ত্রের ক্ষক্তি করে থাকে। VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলাে Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা।

১৯৮০ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক ‘University of New Haven’-এর অধ্যাপক ফ্রেড কোহেন (Fed Cohen)। ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা তথ্য ও উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং যার নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে সাধারণত সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে গোটা কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রকে সংক্রমিত করে অচল করে দেয়। যেমন- বুট ভাইরাস ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমণ করে। অতি পরিচিত কিছু ভাইরাস হলাে স্টোন (Stone), ভিয়েনা (Vienna), সিআইএইচ (CIH), ফোল্ডার (Folder), Trojan Horse ইত্যাদি।

কোনােভাবে কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তা ক্রমে ক্রমে বিস্তার ঘটে। সিডি, পেনড্রাইভ কিংবা অন্য যেকোনােভাবে ভাইরাসযুক্ত একটি ফাইল ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা কোনাে আইসিটি যন্ত্রে চালালে ফাইলের সংক্রমিত ভাইরাস কম্পিউটার বা যন্ত্রটির মেমােরিতে অবস্থান নেয়। কাজ শেষ করে। ফাইল বন্ধ করলেও সংক্রমিত ভাইরাসটি মেমােরিতে রয়েই যায়। ফলে ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একই অবস্থা ঘটে কোনাে ভাইরাস সংক্রমিত প্রােগ্রাম বা সফটওয়্যার চালালেও।

এভাবে মেমােরিতে স্থান দখলকারী ভাইরাস পরবর্তীতে অন্যান্য প্রােগ্রাম এবং ফাইলকেও আক্রমণ করে। কোনাে কোনাে ভাইরাস তাৎক্ষণিকভাবে সকল প্রােগ্রাম ও ফাইলকে গ্রাস করে, আবার কোনাে কোনাে ভাইরাস শুধু নতুন প্রােগ্রাম ও ফাইলকেই আক্রান্ত করে। ফাইল ও প্রােগ্রামসমূহ গ্রাস করতে করতে ভাইরাস তার ইচ্ছামতাে কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সার্বিক ক্ষতিসাধন শুরু করে। এভাবে একটি ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ধীরে ধীরে ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং উক্ত সংক্রমিত কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি, হার্ডডিস্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।

কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ:

  • প্রােগ্রাম ও ফাইল Open করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে;
  • মেমােরি কম দেখাচ্ছে ফলে গতি কমে গেছে;
  • কম্পিউটার চালু অবস্থায় চলমান কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু অপ্রত্যাশিত বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে;
  • নতুন প্রােগ্রাম ইনস্টলের ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে;
  • চলমান কাজের ফাইলগুলাে বেশি জায়গা দখল করছে;
  • যন্ত্র চালু করার সময় চালু হতে হতে বন্ধ বা শাট ডাউন হয়ে যাচ্ছে কিংবা কাজ করতে করতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা রিস্টার্ট হচ্ছে;
  • ফোল্ডারে বিদ্যমান ফাইলগুলাের নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে ইত্যাদি।

ভাইরাস সাধারণত যা যা ক্ষতি করতে পারে :

  • কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোনাে ফাইল মুছে দিতে পারে;
  • ডেটা বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে;
  • কম্পিউটারে কাজ করার সময় আচমকা অবাঞ্ছিত বার্তা প্রদর্শন করতে পারে;
  • কম্পিউটার মনিটরের ডিসপ্লেকে বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে;
  • সিস্টেমের কাজকে ধীরগতি সম্পন্ন করে দিতে পারে, ইত্যাদি।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা কী করতে পারি? এখানেই এন্টিভাইরাসের কথা এসে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের ভাইরাসের প্রতিষেধক হলাে এন্টিভাইরাস। সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি নির্মূল করতে হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এন্টিভাইরাস ইউটিলিটি ব্যবহার করা হয়। এই ইউটিলিটিগুলাে প্রথমে আক্রান্ত কম্পিউটারে ভাইরাসের চিহ্নের সাথে পরিচিত ভাইরাসের চিহ্নগুলাের মিলকরণ করে। অতঃপর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি তার পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে সংক্রমিত অবস্থান থেকে আসল প্রােগ্রামকে ঠিক করে। একটি ভালাে এন্টিভাইরাস সাধারণভাবে প্রায় সব ধরনের ভাইরাস নির্মূল করতে পারে। নতুন ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এন্টিভাইরাস Update করলে এর শক্তি ও কার্যক্ষমতা প্রতিনিয়ত উন্নত হয়। ফলে নতুন নতুন ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। বর্তমানে অনেক এন্টিভাইরাস রয়েছে যেগুলাে ভাইরাস চিহ্নিত করে, নির্মূল করে এবং প্রতিহত করে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দেওয়া থাকে। এছাড়াও এখনকার এন্টিভাইরাসগুলাে ভাইরাস আক্রমণ করার পূর্বেই তা ধ্বংস করে অথবা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে। ফলে এগুলাে পূর্বের এন্টিভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এখানে একটি কথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সবসময় হালনাগাদ (Update) রাখতে হবে।

ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজকাল বিনামূল্যে ইন্টারনেট থেকে এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ডাউনলােড এবং ইনস্টল করে আইসিটি যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা অনেকাংশ নিশ্চিত করা যায়। উল্লেখযােগ্য কিছু এন্টিভাইরাস প্রােগ্রামের নাম হলাে-

  • এভিজি এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avg.com)
  • এভিরা এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avira.com)
  • এভাস্ট এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avast.com)

কম্পিউটার বা আমাদের আইসিটি যন্ত্রগুলােকে ভাইরাসমুক্ত রেখে ব্যবহার করতে আমরা নিচের পদ্ধতিগুলাে অনুসরণ করতে পারি।

  1. অন্য যন্ত্রে ব্যবহৃত সিডি, পেনড্রাইভ, মেমােরি কার্ড ইত্যাদি নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ভাইরাস মুক্ত করে নেয়া। (এন্টি ভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নেওয়া)
  2. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের আগে সফ্টওয়্যারটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
  3. অন্য যন্ত্রের কোনাে ফাইল নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ফাইলটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
  4. ইন্টারনেট থেকে কোনাে সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ডাউনলােড করে ইনস্টল করার সময়ে সতর্ক থাকা। কারণ, ডাউনলােডকৃত সফ্টওয়্যারে ভাইরাস থাকলে তা থেকে তােমার কম্পিউটারটিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে।
  5. অন্যান্য কম্পিউটারে বা যন্ত্রে ব্যবহৃত সফ্টওয়্যার কপি করে ব্যবহার না করা।
  6. কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে সতর্কতামূলক বার্তা প্রদর্শন করার জন্য এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যারটিকে হালনাগাদ করে রাখা প্রয়ােজন।
  7. প্রতিদিনের ব্যবহৃত তথ্য বা ফাইলসমূহ আলাদা কোনাে ডিক বা পেনড্রাইভে ব্যাকআপ রাখা, তবে এক্ষেত্রে ডিস্ক বা পেনড্রাইভটি অবশ্যই ভাইরাস মুক্ত হতে হবে।
  8. ই-মেইল আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন : সন্দেহজনক সোের্স থেকে আগত ই-মেইল open না করা। করলেও ভাইরাসমুক্ত করে তা খােলা উচিত।
  9. গেম ফাইল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভাইরাস চেক করতে হবে।

সার্ভার, কম্পিউটার বা যেকোনাে আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে গােপনীয়তা বজায় রাখার কাজটিও পাসওয়ার্ড করে থাকে। 

তবে পাসওয়ার্ড অবশ্যই মনে রাখার মত হওয়া উচিত। প্রায়শ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাও একটি জরুরি কাজ। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গােপনীয়তা রক্ষা করতে সক্ষম হব।

 

শেয়ার করুন
ট্যাগ :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কম্পিউটারে ভাইরাস ও এর প্রতিকার

আপডেট: ০৯:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে বা নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে। একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

 আইসিটি যন্ত্রের নিরাপত্তার কথাটি মাথায় রেখে এ বিষয়ে আরও জানা প্রয়োজন। প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের মতোই এ ভাইরাসগুলাে আমাদের আইসিটি যন্ত্রের ক্ষক্তি করে থাকে। VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলাে Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা।

১৯৮০ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক ‘University of New Haven’-এর অধ্যাপক ফ্রেড কোহেন (Fed Cohen)। ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা তথ্য ও উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং যার নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে সাধারণত সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে গোটা কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রকে সংক্রমিত করে অচল করে দেয়। যেমন- বুট ভাইরাস ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমণ করে। অতি পরিচিত কিছু ভাইরাস হলাে স্টোন (Stone), ভিয়েনা (Vienna), সিআইএইচ (CIH), ফোল্ডার (Folder), Trojan Horse ইত্যাদি।

কোনােভাবে কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তা ক্রমে ক্রমে বিস্তার ঘটে। সিডি, পেনড্রাইভ কিংবা অন্য যেকোনােভাবে ভাইরাসযুক্ত একটি ফাইল ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা কোনাে আইসিটি যন্ত্রে চালালে ফাইলের সংক্রমিত ভাইরাস কম্পিউটার বা যন্ত্রটির মেমােরিতে অবস্থান নেয়। কাজ শেষ করে। ফাইল বন্ধ করলেও সংক্রমিত ভাইরাসটি মেমােরিতে রয়েই যায়। ফলে ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একই অবস্থা ঘটে কোনাে ভাইরাস সংক্রমিত প্রােগ্রাম বা সফটওয়্যার চালালেও।

এভাবে মেমােরিতে স্থান দখলকারী ভাইরাস পরবর্তীতে অন্যান্য প্রােগ্রাম এবং ফাইলকেও আক্রমণ করে। কোনাে কোনাে ভাইরাস তাৎক্ষণিকভাবে সকল প্রােগ্রাম ও ফাইলকে গ্রাস করে, আবার কোনাে কোনাে ভাইরাস শুধু নতুন প্রােগ্রাম ও ফাইলকেই আক্রান্ত করে। ফাইল ও প্রােগ্রামসমূহ গ্রাস করতে করতে ভাইরাস তার ইচ্ছামতাে কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সার্বিক ক্ষতিসাধন শুরু করে। এভাবে একটি ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ধীরে ধীরে ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং উক্ত সংক্রমিত কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি, হার্ডডিস্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।

কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ:

  • প্রােগ্রাম ও ফাইল Open করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে;
  • মেমােরি কম দেখাচ্ছে ফলে গতি কমে গেছে;
  • কম্পিউটার চালু অবস্থায় চলমান কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু অপ্রত্যাশিত বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে;
  • নতুন প্রােগ্রাম ইনস্টলের ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে;
  • চলমান কাজের ফাইলগুলাে বেশি জায়গা দখল করছে;
  • যন্ত্র চালু করার সময় চালু হতে হতে বন্ধ বা শাট ডাউন হয়ে যাচ্ছে কিংবা কাজ করতে করতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা রিস্টার্ট হচ্ছে;
  • ফোল্ডারে বিদ্যমান ফাইলগুলাের নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে ইত্যাদি।

ভাইরাস সাধারণত যা যা ক্ষতি করতে পারে :

  • কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোনাে ফাইল মুছে দিতে পারে;
  • ডেটা বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে;
  • কম্পিউটারে কাজ করার সময় আচমকা অবাঞ্ছিত বার্তা প্রদর্শন করতে পারে;
  • কম্পিউটার মনিটরের ডিসপ্লেকে বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে;
  • সিস্টেমের কাজকে ধীরগতি সম্পন্ন করে দিতে পারে, ইত্যাদি।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা কী করতে পারি? এখানেই এন্টিভাইরাসের কথা এসে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের ভাইরাসের প্রতিষেধক হলাে এন্টিভাইরাস। সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি নির্মূল করতে হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এন্টিভাইরাস ইউটিলিটি ব্যবহার করা হয়। এই ইউটিলিটিগুলাে প্রথমে আক্রান্ত কম্পিউটারে ভাইরাসের চিহ্নের সাথে পরিচিত ভাইরাসের চিহ্নগুলাের মিলকরণ করে। অতঃপর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি তার পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে সংক্রমিত অবস্থান থেকে আসল প্রােগ্রামকে ঠিক করে। একটি ভালাে এন্টিভাইরাস সাধারণভাবে প্রায় সব ধরনের ভাইরাস নির্মূল করতে পারে। নতুন ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এন্টিভাইরাস Update করলে এর শক্তি ও কার্যক্ষমতা প্রতিনিয়ত উন্নত হয়। ফলে নতুন নতুন ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। বর্তমানে অনেক এন্টিভাইরাস রয়েছে যেগুলাে ভাইরাস চিহ্নিত করে, নির্মূল করে এবং প্রতিহত করে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দেওয়া থাকে। এছাড়াও এখনকার এন্টিভাইরাসগুলাে ভাইরাস আক্রমণ করার পূর্বেই তা ধ্বংস করে অথবা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে। ফলে এগুলাে পূর্বের এন্টিভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এখানে একটি কথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সবসময় হালনাগাদ (Update) রাখতে হবে।

ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজকাল বিনামূল্যে ইন্টারনেট থেকে এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ডাউনলােড এবং ইনস্টল করে আইসিটি যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা অনেকাংশ নিশ্চিত করা যায়। উল্লেখযােগ্য কিছু এন্টিভাইরাস প্রােগ্রামের নাম হলাে-

  • এভিজি এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avg.com)
  • এভিরা এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avira.com)
  • এভাস্ট এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (ডাউনলােড ওয়েবসাইট www.avast.com)

কম্পিউটার বা আমাদের আইসিটি যন্ত্রগুলােকে ভাইরাসমুক্ত রেখে ব্যবহার করতে আমরা নিচের পদ্ধতিগুলাে অনুসরণ করতে পারি।

  1. অন্য যন্ত্রে ব্যবহৃত সিডি, পেনড্রাইভ, মেমােরি কার্ড ইত্যাদি নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ভাইরাস মুক্ত করে নেয়া। (এন্টি ভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নেওয়া)
  2. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের আগে সফ্টওয়্যারটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
  3. অন্য যন্ত্রের কোনাে ফাইল নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ফাইলটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
  4. ইন্টারনেট থেকে কোনাে সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ডাউনলােড করে ইনস্টল করার সময়ে সতর্ক থাকা। কারণ, ডাউনলােডকৃত সফ্টওয়্যারে ভাইরাস থাকলে তা থেকে তােমার কম্পিউটারটিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে।
  5. অন্যান্য কম্পিউটারে বা যন্ত্রে ব্যবহৃত সফ্টওয়্যার কপি করে ব্যবহার না করা।
  6. কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে সতর্কতামূলক বার্তা প্রদর্শন করার জন্য এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যারটিকে হালনাগাদ করে রাখা প্রয়ােজন।
  7. প্রতিদিনের ব্যবহৃত তথ্য বা ফাইলসমূহ আলাদা কোনাে ডিক বা পেনড্রাইভে ব্যাকআপ রাখা, তবে এক্ষেত্রে ডিস্ক বা পেনড্রাইভটি অবশ্যই ভাইরাস মুক্ত হতে হবে।
  8. ই-মেইল আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন : সন্দেহজনক সোের্স থেকে আগত ই-মেইল open না করা। করলেও ভাইরাসমুক্ত করে তা খােলা উচিত।
  9. গেম ফাইল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভাইরাস চেক করতে হবে।

সার্ভার, কম্পিউটার বা যেকোনাে আইসিটি যন্ত্রে রক্ষিত তথ্য ও উপাত্তের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে গােপনীয়তা বজায় রাখার কাজটিও পাসওয়ার্ড করে থাকে। 

তবে পাসওয়ার্ড অবশ্যই মনে রাখার মত হওয়া উচিত। প্রায়শ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাও একটি জরুরি কাজ। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ও গােপনীয়তা রক্ষা করতে সক্ষম হব।

 

শেয়ার করুন