জাপার পরিচয় দিয়ে অনেকে এরশাদকে মুছে ফেলতে চাইছেন: রওশন

- আপডেট: ০৮:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
- / 23
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণসভায় বক্তারা। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান এবং প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ বলেছেন, আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতাকর্মীদের কত ভালোবাসতেন এবং কত আদর করতেন। আপনারা কি কেউ তাকে ভুলতে পারবেন? অথচ অনেকে আছেন- যারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দিয়েও এরশাদকে মুছে ফেলতে চাইছেন। বিগত নির্বাচনে পল্লীবন্ধুর নাম মুখে নেওয়া হয়নি। নির্বাচনি ইশতেহারে পল্লীবন্ধুর ছবিটা পর্যন্ত রাখা হয়নি।
রবিবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে রওশন এসব বলেন। সভায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে।
রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদকে যারা ভালোবাসেন তারা এরশাদের প্রতি এমন আচরণ মানতে পারেননি। তাই যেখানে একক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো- সেখানে এবার মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তাও জাতীয় পার্টির ভোট নয়, ওটা ছিলো সমঝোতার ভোট।
রওশন এরশাদ বলেন, আমরা এরশাদের নিজ হাতে গড়া জাতীয় পার্টিকে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না। জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো দ্বিধা-বিভক্তি হতে দেবো না। তাহলে পল্লীবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে। আমরা সবাই পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রবর্তিত শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করতে চাই। পল্লীবন্ধুর নীতি ও আদর্শই আমাদের রাজনীতি। জাতীয় পার্টির পরিচয় দিয়ে সেই আদর্শকে কেউ মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন না। আমি বিশ্বাস করি, যারা পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাস করেন, যারা পল্লীবন্ধুকে ভালোবাসে- তাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নাই। আমরা এক আছি এবং ঐক্যবদ্ধই থাকবো।
এসময় সাবেক বিরোধী দলের নেতা বলেন, দেশে এখন নানাবিধ সমস্যা বিরাজ করছে। ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। দেশে বেকার সমস্যা বেড়েই চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এদিকে দেশে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের দুর্গতি বেড়েই যাচ্ছে। দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে পল্লীবন্ধু এরশাদ বেঁচে থাকলে- তিনি বসে থাকতে পারতেন না। তিনি বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে ছুটে যেতেন।
রওশন বলেন, আমি মনে করি দেশের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক আছেন। কিন্তু সমাধানের পদক্ষেপ গুলো যথার্থ নয়। ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হতে না হতেই- সরকারের উচিৎ ছিলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে- সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। সরকার সেটা এখনো করতে পারেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির এই নেতা-কর্মীরা পার্টির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিগত নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। কর্মী-সমর্থকদের মন ভেঙ্গে যায়। তাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। সেই অবস্থায় এই নেতৃবৃন্দ আবার পার্টির হাল ধরেছেন। পার্টিকে চাঙ্গা করে তুলেছেন। আমি পার্টির যে কোনো দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। তাদের সাহস দিয়েছি এবং পার্টিকে সংগঠিত রেখেছি। এবারও তাই করেছি। আপনারা কেউ হতাশ হবেন না। জাতীয় পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো। প্রিয় নেতার এই মৃত্যু বার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
স্মরণসভায় দলটির মহাসচিব কাজী মোঃ মামুনূর রশিদ, আমন্ত্রিত অতিথি জাতীয় পার্টি জেপি) মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম, বিএলডিপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নাজিমুদ্দিন আল আজাদ, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, সাবেক রাষ্ট্রপতির ফটোগ্রাফার ইকবাল চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব পীরজাদা সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোঃ আবু সালেহ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাহিন আরা সুলতানা রিমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাহিদুর রহমান টেপা, গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভরায়, এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, ইয়াহিয়া চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম শফিক, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, হাজী তুহিনুর রহমান নুরু হাজী, খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু প্রমুখ।